শুক্রবার, ৯ নভেম্বর, ২১১৪

অনেক বছর আগে

জীবনানন্দ আমাকে যতখানি বদলে দিয়েছে ততটা আর কিছু নয়। আমি দুহাজার তিন এ জীবনানন্দের রচনাবলী বাংলায় টাইপ করিয়েছিলাম। টাইপিস্টরা বিজয় ফন্টে টাইপ করেছিল। আমি একটা কনভার্টার লিখে সেটাকে ইউনিকোডে বদলেছিলাম।
আমার কনভার্টারে বাগ ছিল, টাইপিস্টদের টাইপে কিছু ভুল ছিল। সব মিলিয়ে বেশ অনেকটা ভুল।
জীবনানন্দের লেখা এই বছর পাবলিক ডোমেইনে এসেছে। আমি এত বছর অপেক্ষা করেছি এই টেক্সট অনলাইনে দিতে। ভালো হত যদি bn.wikisource.org এ দিতে পারতাম। সেটা করতে চাইলে কখনো হয়ে উঠতো না হয়ত। তাই এখানে দিয়ে দিচ্ছি। কেউ চাইলে প্রুফ রিড করে উইকি সঙ্কলনে তুলে দেবেন। আপনি যদি প্রুফ রিড করতে চান আমার সাথে যোগাযোগ করুন snewaj at gmail dot com এ। আমি আপনাকে এই ব্লগে এডিটর হিসেবে যোগ করে দেব।

পুরো টেক্সট নামিয়ে নিতে পারেন এখান থেকে।

আমি চেষ্টা করবো তার ছোটগল্প গুলো টাইপ করিয়ে ফেলতে।

সবাই জীবনানন্দের অদ্ভুত আঁধারে স্বাগতম।

The text publised in this blog is written by Jibanananda Das. Jibanananda Das (Bengali: জীবনানন্দ দাশ, /dʒɪbɒnʌnɒndɔː dʌʃ/) (17 February 1899 – 22 October 1954) was a Bengali poet, writer, novelist and essayist.
Due to copyright law of Bangladesh and India His works are available under public domain from 2014 after 60 years of his death. Me being a admirer of his work, took the liberty to type and publish this text online. This text is not proof read and not complete. In case of any dispute please contact me snewaj at gmail dot com.

রবিবার, ১৬ নভেম্বর, ২০১৪

যে কামনা নিয়ে

যে কামনা নিয়ে মধুমাছি ফেরে বুকে মোর সেই তৃষা!
খুঁজে মরি রূপ, ছায়াধূপ জুড়ি,
রঙের মাঝারে হেরি রঙডুরি!
পরাগের ঠোঁটে পরিমল-গুঁড়ি,---
হারায়ে ফেলি গো দিশা!

আমি প্রজাপতি---মিঠা মাঠে মাঠে সোঁদালে সর্ষেক্ষেতে;
---রোদের সফরে খুঁজি নাকো ঘর,
বাঁধি নাকো বাসা---কাঁপি থরথর|
অতসী ছুঁড়ির ঠোঁটের উপর
শুড়ির গেলাসে মেতে!

আদিক্ষিণা--দুলালরি বীণা,--পউষ-পরষ-পরশ-হারা!
ফুল-আঙিয়ার আমি ঘুমভাঙা!
পিয়াল চুমিয়া পিলাই গো রাঙা
পিয়ালার মধু,--তুমি রাতজাগা
হোরীর হা রা রা সাড়া!

আমি গো লালিমা,---গোধূলির সীমা,---বাতাসের ‘লালা ফুল
দুই নিমেষের তরে আমি জ্বালি
নীল আকাশের গোলাপি দেয়ালি!
আমি খুশরোজী,---আমি গো খেয়ালি,
চঞ্চল,--চুল্বুল্!

বুকে জ্বলে মোর বাসর দেউটি,--মধু-পরিণয়-রাতি!
তুলিছে ধরণী বিধবা-নয়ন
-- মনের মাঝারে মদনমোহন
মিলননদীর নিধুর কানন
রেখেছে রে মোর পাতি!

দক্ষিণা

প্রিয়ার গালেতে চুমো খেয়ে যায় চকিতে পিয়াল রেণু!---
এ দিক্ষণা,---কাননের বীণা,---বনানীপথের বেণু!
তাই মৃগী আজ মৃগের চোখেতে বুলায়ে নিতেে আঁখি,
বনের কিনারে কপোত আজিকে নেয় কপোতীরে ডাকি!
ঘুঘুর পাখায় ঘুঙুর বাজায় আজিকে আকাশখান,---
আজ দখিনার ফর্দা হাওয়ায় পর্দা মানে না মানা!
শিশিরশীণ্যা বালার কপোলে কুহেলির কারো জাল
উষ্ঞ চুমোর আঘাতে হয়েছে ডালিমের মতো লাল!
দাড়িমের বীজ ফাটিয়া পড়িছে অদরের চারিপাশে
আজ মাধবীর প্রথম উষায়,---দখিনা হাওয়ার শ্বাসে!
মদের পেয়ালা শুকায়ে গেছিল,---উড়ে গিয়েছিল মাছি,
দখিনাপরশে ভরা পেয়ালায় বুদবুদ ওঠে নাচি!
বেয়ালার সুরে বাজিয়া ইঠচে শিরউপশিরাগুলি!
শ্মশানের পথে করোটি হাসিছে,---হেসে খুন হল খুলি!
এস্রাজ বাজে আজ মলয়ের,---চিতার রৌদ্রাতপ
সুরের সুঠামে নিভে যায় যেন,--বৈতরণীর জলে
সুর-জাহ্নবী ফুটে ওঠে আজ মলয়ের কোলাহলে!
আকাশ-শিথানে মধু-পরিণয়,---মিলন-বাসর পাতি
হিমানীশীর্ণ বিধবা তারারা জ্বলে ওঠে রাতারতি!
ফাগুয়ার রগে চাঁদের কপোল চকিতে হয়ে ছে রাঙা!
লালসে কাহার আজ নীলিমার আনন রুধির-লাল,--
নিখিলের গালে গাল পাতে কার কুন্কুম-ভাঙা গাল!
নারাঙ্গি-ফাটা অধর কাহার আকাশ বাতাসে ঝরে!
কাহার বাঁশিটি খুন উথলায়,--পরান উদাস করে!
কাহার পানেতে ছুটিছে উধাও শুিপিয়ালের শাখা!
ঠোঁটে ঠোঁটে ডলে---পরাগ চোঁয়ায় অশোকফুলের ঝাঁকা!
কাহার পরশে পলাশ-বধূর আঁখির কেশরগুলি
মুদে মুদে আসে,---আর বার করে কুঁদে কুঁদে কোলাকুলি!
পাতার বাজারে বাজে হুল্লোড়,--পায়েলার রুণ্ রুণ্,ইকশলয়দের ডাঁশা পেষে কে গো--চোখ করে ঘুম-ঘুম!
এেেসছ দখিনা---ক্ষীরের মাঝারে লুকায়ে কোন এক হীরের ছুরি!---
তহার লাগি তবু ক্ষ্যাপা শাল নিম, তমাল-বকুলে হুড়াহুড়ি!
আমের কুঁড়িতে বাউল বোলতা খুনসুড়ি দিয়ে খসে যায়,
অঘ্রানে যার ঘ্রাণ পেয়েছিল,---পেয়েছিল যারে ‘পোষলারয়
সাতাশে মাঘের বাতাসে তাহার দর বেড়ে গেছে দশগুণ,----
নিছক হাওয়ায় ঝরিয় পড়িছে আজ মউলের কষ গুণ্!
ঠেলে ফেলে দিয়ে নীলমাছি আর প্রজাপতিদের ভিড়
দখিনার মুখে রসের বাগান বিকায়ে দিতেছে ক্ষীর!
এসেছে নাগর,--যানিনীর আজ জাগর রঙিন আঁখি,---
কুয়াশার দিনে কাঁচলি বাঁদিয়া কুচ রেখেিছিল ডাকি,
আজিকে কাঞ্চী যেতেছে খুলিয়া,---মদঘূর্ণনে হায়!
নিশীথের স্বেদ-সীধুধারা আজ ক্ষরিছে দক্ষিণায়!
রূপসী ধরণী বাসকসজ্জা,--রূপালি চাদের তলে
বালুর ফরাশে রাঙা উল্লাসে ঢেউয়ের আগুন জ্বলে!
রোল উতরোল শোনিতে শিরায়,---হিারীর হা রা রা চীত্কার,---
মুখে মুখে মধু,---সুধাসীধু শুধু,---তিত্ কোথা আজ---তিত্ কার!
শীতের বাস্তুভিত ভেঙে আজ এল দক্ষিণা,---মিষ্টি-মধু,
মদেনর হুলে ঢুলে ঢুলে ঢুলে হুঁশ-হারা হল সৃষ্টি-বধূ!

চাঁদিনীতে

বেবিলোন কোথা হারিায়ে গিয়েছে,---মিশর-‘অসুর কুয়াশাকালো;
চাঁদ জেগে আছে আজো অপলক,--মেঘের পালকে ঢালিছে আলো!
েস যে জানে কত পাথারের কথা,---কত ভাঙা হাট মাঠের স্মৃতি!
কত যুগ কত যুগান্ত্মরের সে ছিল জ্যোত্স্না, শুক্লাতিথি!
হয়তো সিদিনো আমাদেরি মতো পিলুবারোয়াঁর বাঁশিটি নিয়া
ঘাসের ফরাশে বসিত এমনি দূর পরদেশী প্রিয় ও প্রিয়া!
হয়তো তাহারা আমাদেরি মতো মধু-উত্সবে উঠিত মেতে
চাঁদের আলোয় চাঁদমারী জুড়ে,---সবুজ চরায়,---সবজী ক্সেতে!
হয়তো তাহারা দুপুর-যামিনী বালুর জাজিমে সাগরতীরে
চাঁদের আলোয় দিগদিগন্ত্মে চকোরের মতো চরিত ফিরে!
হয়তো তাহারা মদঘূর্ণনে নাচিত কাঞ্চীবাঁধন খুলে
এম্নি কোন্ এক চাঁদের আলোয়,---মরু-‘ওয়েসিসে তরুর মূল্যে!
বীর যুবাদল শত্রুর সনে বহদিনব্যাপী রণের শেষে
এম্নি কোন্ এক চাঁদিনীবেলায় দাঁড়াত নগরীতোরণে এসে!
কুমারীরর ভিড় আসিত ছুটিয়া, প্রণীয়ীর গ্রীবা জকড়ায়ে নিয়া
হেঁটে যেত তারা জোড়ায় জোড়ায় ছায়াবীথিকার পথটি দিয়া!
তাদের পায়ের আঙুলের ঘায়ে খড়-খড় পাতা উঠিত বাজি,
তাদের শিয়রে দুলিত জ্যোত্স্না-চাঁচর চিকণ পত্ররাজি!
দখিনা উঠিত মর্মরি মধূবনানীর লতা-পল্লব ঘিরে,
চপল মেয়েরা উঠিত হাসিয়া,---‘এর বল্লভ,---এল রে ফিরে!
---তুমি ঢুলে যেতে দশমীর চাঁদ তাহাদের শিরে সারাটি নিশি,
নয়নে তাদের দুলে যেতে তুমি,---চাঁদনী-শরাব,---সরার শিশি|
সেদিনো এম্নি মেঘের আসরে জ্বলেছে পরীর বাসরবাতি,
হয়তো সেদিনো ফুটেছে মোতিয়া,ঝরেছে চন্দ্রমল্লীপাঁতি!
হয়তো সেদিনো নেশাখোর মাছি গুমরিয়া গেছে আযুরবনে,
হয়তো সেদিনো আপেলের ফুর কেঁপেছে আঢুল হাওয়ার সনে
হয়তো সেদিনো এলাচির বন আতারের শিশি দিয়েছে ঢেলে,
হয়তো আলেয়া গেছে ভিজা মাঠে এমনি ভূতুড়ে প্রদীপ জ্বেলে!
হয়তো সেদিনো ডেকেছে পাপিয়া কাঁপিয়া কাঁপিয়া ‘সরোর শাখে,
হয়তো সেদিনো পাড়ার নাগরী ফিরেচে এমনি গাগরি কাঁখে!
হয়তো সেদিনো পানসী দুলায়ে গেছে মাঝি বাঁকা ঢেইট বেয়ে,
হয়তো সেদিনো  মেঘের শকুনডানায় গেছিল অাকাশ ছেয়ে!
হয়তো সেদিনো  মানিকজোড়ের মরা পাখিটির ঠিকানা মেগে
অসীম আকাশে ঘুরেছে পাখিনী ছট্ফট্ দুটি পাখার বেগে!
হয়তো সেদিনো খুর্ খুর্ করে খরগোশছানা গিয়েছে ঘুরে
ঘন-মেহগিনি-টার্পিন-তলে---বালির জর্দা বিছানা ফুঁড়ে|
হয়তো সেদিনো জানায়লার নীল জাফরির পাশে একেলা বসি
মরেন হারিণী হেরেছে তোমাে---বনের পারের ডাগর শশী!
শুক্লা একাদশীর নিশীথে মণিহর্মের তোরণে গিয়া
পারাত-দূত পাঠায়ে দিয়েছে প্রিয়ের তরেতে হয়তো প্রিয়া!
অলিভকুঞ্জো হা হা করে হাওয়া কেঁদেছে কাতর যামিনী ভরি!
ঘাসের শাটিনে আলোর ঝালরে ‘মার্টিলপাতা পড়েছে ঝরি!
 উইলোর বন উঠেছে ফঁপায়ে,---‘ইউ তরুশাখা গিয়েছে ভেঙে,
তরুণীর দুধ-ধবধবে বুকে সাপিনীর দাঁত উঠেছে রেঙে!
কোন গ্রীস,--কোন কার্থেজ, রোম, ‘ক্রুবেদেূর-যুগ কোন্---
চাঁদের আলোয় স্মৃতির কবর-সফরে বেড়ায় মন!
জানি না তো কিছু---মনে হয় শুধু এম্নি তুহিন চাঁদের নিচে
কত দিকে দিকে---কত কালে কালে হয়ে গেছে কত কি যে!
কত যে শ্মশান,---মশান কত যে,--কত যে কামনা-পিপাসা-আশা
অস্ত্মাচাঁদের আকামে বেঁধেছে আরব-উপন্যাসের বাসা!

মরুবালু

হাড়ের মালা গলায় গেঁথে---অট্টহাসি হেসে
উল্লাসেতে টলছে তারা,---জ্বলছে তারা খালি!
ঘুরছে তারা লাল মশানে কপাল-কবর ঘেঁষে,
বুকের বোমাবারুদ দিয়ে আকাশটারে জ্বালি
পাঁয়জোরে কাল মহাকালের পাঁচার ফেঁড়ে ফেঁড়ে
মড়ার বুকে চাবুক মেরে ফিরছে তরুর বালি!
সর্বনাশের সঙ্গে তোরা দম্ভে খেলিস পাশা!
হেথায় কোন্ এক সৃষ্টিপ্রাতের সূত্রপাতের ভূমি,
---শিশু মানব গড়েছিল ঐ সাহারায় বাসা;
---সে সব গেছ করেব ঘুমের চুমার ধোঁয়ায় ধূমি!
অটল আকাশ যাচ্ছে জরির ফিতার মতো ফেঁড়া,
জবান তোদের জ্বলছে যমের চিতার গেলাস চুমি!

তোদের সনে ‘ডাইনোসুরের লড়াই হলো কত,--
আলুথালু লুটিয়ে বালুর ডাইনী ছায়ার তলে
আজকে তার ঘুমিয়ে আছে,---চুল্লি শত শত
উঠলো জ্বলে তাদের হাড়ে,---তাদের নাড়ের বলে;
কাঁদছে খাঁ খাঁ কাফন-ঢাকা বালুর চাকার নিচে
মুণ্ড তাদের,---মড়ার কপাল ভৈরবেরি গলে!

তোদের বুকে জাগছে মৃগতৃষ্ঞা,---জাগে ঝড়!
নিস উড়িয়ে শিকারঢ়সোয়ার ধোঁয়ার পিছে পিছে,---
মেঘে মেঘে চড়াও,---বাজের বুক চিরে চক্কর!
নাচতে আছিস আকাশখানার গোখ্রাফণার নিচে,
আরব মিশর চীন ভারতের হাওযায় ঘুরে ঘুরে!
সত্য ত্রেতা দ্বাপর কলি হাপর খিঁচে খিঁচে!

তোদের ভাষা আস্ফালিছে শেখ্ সেনানরি বুকে!
---লাল সাহারার শেরের সোয়ার,---বালুর ঘায়ে ঘেয়ো,
ধমক মেরেে আঁধির বুকে ছুটছে রুকে রুখে!
---তোদের মতন নেইকো তাদের সোদর-সাথী কেহ,
নেইকো তাদের মোদের মতন পিছুডাকের মায়া,
নেইকো তাদের মোদের মতন আর্ত মোহ-স্নেহ!

দানোয়-পাওয়া আগুনদানা,---দারুণ পথের মুখে!
ঘায়েল করি মেঘের বুরুজ বল্লমেরি ঘর,
উড়িয়ে হাজার ‘ক্যারাভেনও তাম্বশিবির বুকে,
উজিয়ে মরীচিকার শিখা---কালফণা জর্জর,
---টলতে আছিস,---দলতে আছিস,---জ্বলতে আছিস ধূ ধূ!
সঙ্গে স্যাঙাত---মসুদ্ ডাকাত,---তাতার যাযাবর!

গাড়তে যাবে যারা তোদের বুকের মাঝে বাসা
হাড্ডি তাদের ফোঁফরা হয়ে ঝুরবে বালুর মাঝে,
এইখানেতে নেইকো দরদ,--,নেইকো ভালোবাসা,
বর্শা লাফায়,---উটের গলার ঘুন্টি শুধু বাজে!
ফুরিয় গেছে আশা যাদের,---জুড়িয়ে গেছে জ্বালা,
আর রে বালুর ‘কারবালাতে, অন্ধকারের ঝাঁঝে!

পিরামিড

---বেলা বেয় যায়
গোধূলির মেঘ-সীমানায়
ধূম্র মৌন সাঁঝে
নিত্য নব দিবসের মৃতু্যঘন্টা বাজে!
শতাব্দীর শবদেহে শ্মশানের ভষ্মবহ্নি জ্বলে!
পান্থ ম্লান চিতার কবলে
একে একে ডুবে যায় দেশ, জাতি,--সংসার, সমাজ,
কার লাগি হে সমাধি, তুমি একা বসে আছ আজ
কী এক বিক্ষুব্ধ প্রেতকায়ার মতনÒ
অতীতের শোভাযাত্রা কোথায় কখন
চকিতে মিলায়ে গেছে-পাও নাই টের!
কোন দিবা অবসানে গৌরবের লক্ষ মুসাফের
দেউটি নিভায়ে গেছে,---চলে গেছে দেউল ত্যজিয়া,
চলে গেছে প্রিয়তম,---চলে গেছে প্রিয়া!
যুগান্ত্মের মণিময় গেহবাস ছাড়ি
চকিতে চলিয়া গেছে বাসনা-পসারী,
কবে কোন্ বেলাশেষে হায়
দূর অস্ত্মশেখরের গায়!
তোমারে যায়নি তারা শেষ অভিনন্দনের অর্ঘ্য সমর্পিয়া;
সাঁজের নীহারনীল সমুদ্য মথিয়া
মরমে পশেনি তব তাহাদের বিদায়ের বাণী!
তোরণে আসেনি তব লক্ষ লক্ষ মরণ-সন্ধানী
অশ্রু-ছলছল চোখে,---পাণ|ডুর বদনে!
---কুষ্ঞ যবনিকা করেব ফেলে তারা গেল দূর দ্বারে বাতায়নে
জানো নাই তুমি!
জানে না তো মিশরেরর মূক মরুভূমি
তাদের সন্ধান!
হি নির্বাক পিরামি,---অতীতের স্ত্মব্ধ প্রেত-প্রাণ
অবিচল স্মৃতির মন্দির!
আকাশের পানে চেয়ে আজো তুমি বসে আছো স্থির!
নিষ্পলক যুগ্মভুরু তুলে
চেয়ে আছো অনাগত উদধির কূলে
মেঘ-রক্ত ময়ূখের পানে!
জ্বলিয়া যেতেছে নত্যি নিশি-অবসানে
নূতন ভাস্কার!
বেজে ওঠে অনাহত মেম্ননের স্বর
নিবেদিন অরুণের সনে
কোন্ আশা-দূরাশার ক্ষণস্থায়ী অঙ্গুলি-তাড়নে!
--পিরামিড-পাষাণের মর্ম ঘেরি নেচে যায় দুদণ্ডের
রুধির-ফোয়ারা
কি এক প্রগল্ভ উষ্ঞ উল্লাসের সাড়া!
থেমে যায় পান্থবীণা মুহূর্তে কখন!
শতাব্দীর বিরহীর মন
নিটল নিথর
সন্ত্মরি ফিরিয়া মনে গগনের রক্ত-পীত সাগরের পরে!
বালুকার স্ফীত পারাবারে
লোল মৃগতৃষ্ঞিকার দ্বারে
মিশরের অপহৃত অন্ত্মরের লাগি
মৌন ভিক্ষা মাগি!---
--খুলে যাবে কবে রুদ্ধ মায়ার দুয়ার!
মুখরিত প্রাণের সঞ্চার
ধ্বনিত হইবে করেব কলহীন নীলার বেলায়!---
--বিচ্ছেদের নিশি জেগে আজো তাই বসে আছে
পিরামিড হায়!
-- কত আগন্তুক-কাল,---অতিথি--সভ্যতা
তোমার দুয়ারে এসে কয়ে যায় অসম্বৃত অন্ত্মরের কথা!
তুলে যায় উচ্ছৃঙ্খল রুদ্র কোলাহল!
--তুমি রহ নিরুত্তর,---নির্বেদী,---নিশ্চল!
মৌন, অন্যমনা!
---প্রিয়ার বক্ষের পরের বসি একা নীরবে করিছ তুমি
শবের সাধনা
হে প্রেমিক---স্বতন্হত্র স্বরাট!
---কবে সুপ্ত উত্সবের স্ত্মব্ধ ভাঙা হাট
উঠিবে জাগিয়া!
সস্মিত নয়ন তুলি কবে তব প্রিয়া
আঁকিবে চুম্বন তব স্বেদ-কৃষ্ঞ, পাণ|ডু, চূর্ণ,
ব্যথিত কপোলে!
মিশর-অলিন্দে কবে গরিমার দীপ যাবে জ্বলে!
বসে আছো অশ্রুহীন স্পন্দহীন তাই!
---ওলটিপালটি যুগ-যুগন্ত্মের শ্মশানের ছাই
জাগিয়া রয়েছে তব প্রেত-আঁখি,--,প্রেমের প্রহরা!
---মোদের জীবনে যবে জাগে পাতা-ঝরা
হেমন্ত্মের বিদায়-কুহেলি,
অরুন্তুদ আঁখি দুটি মেলি
গড়ি মোরা স্মৃতির শ্মশান
দুদিনের তরে শুধু,---নবোত্ফুল্লা মাধবীর গান
মোদের ভুলায়ে নেয় বিচিত্র আকাশে
নিমেষে চকিতে!
---অতীতের হিমগর্ভ কবরের পাশে
ভুলে যাই দুই ফোঁটা অশ্রু ঢেলে দিতে!

মিশর

‘মমীর দেহ বালুর তিমির যাদূর ঘরে লীন,--
‘স্ফীন্ক্স-দানবীর অরাল ঠোঁটের আলাপ আজি চুপ!
ঝাঁ ঝাঁ মরুরু ‘লুয়ের  ‘ফুঁয়ে হচ্ছে বিলীন-ক্ষীণ
মিশর দেশের কাফন পাহাড়---পিরামিডের স্তূপ!

নিভে গেছে ‘ঈশিশেররি বেদীর থেকে ধূমা,
জুড়িয়ে গেছে লক্লকে সেই রক্তজিভার চুমা!
এদ্দিনেতে ফুরিয়ে গেছে কুমীরপূজার ঘটা,
দুলছে মরুমশান-শিরে মহাকালের জটা!
ঘুমন্ত্মদের কানে কানে কয় সে, ---‘ঘুমা,---ঘুমা!

ঘুমিয়ে গেছে বালুর তলে ফ্যারাও,---ফ্যারাও ছেলে,---
তাদের বুকে যাচ্ছে আকাশ বর্শা ঠেলে ঠেলে!
হাওয়ার সেতার দেয় ফুঁপিয়ে ‘ মেম্ননেরি বুক,
যুবে গেছে মিশররবি,---বিরাট ‘বেলের ভুখ
জিহ্বা দিয়ে জঠর দিয়ে গেছে তোমায় জ্বেলে!

পিরামিডের পাশাপাশি লালচে বালুর কাছে
স্থবির মরণ-ঘুমের ঘোরে মিশর শুয়ে আছে!
সোনার কাঠি নেই কি তাহার? জাগবে নাকি আর!
মৃতু্য,---সে কি শেষের কথা?---শেষ কি শবাধার!
সবাই কি গো ঢালাই হবে চিতার কালির ছাঁচে!

নীলার ঘোলা জলের দোলায় লাফায় কালো সাপ|
কুমীরগুলোর খুলির খিলান,---করাত-দাঁতের খাপ
উর্ধ্বমুখে রৌদ্র পোহায়;---ঘুমপাড়ানির ঘুম
হানছে আঘাত,---আকাশবাতাস হচ্ছে যেন গুম!
ঘুমের থেকে উপচে পড়ে মৃত্যের মনস্ত্মাপ!

নীলা, নীলা,--ধুক্ধুকিয়ে মিশরকবর-পারে
রইলে জেগে বোবাবুকের বিকল হাহাকারে!
লাল আলেয়ায় খেয়া ভাসায় ১রামেসেসের দেশ!
অতীত অভিশাপের নিশা এলিয়ে এলোকেশ
নিভিয়ে দেছে দেউটি তোমার দেউল-কিনারে!

কলসী কোলে নীলনদেতে যেতেছে ঐ নারী,
ঐ পথেতে চলতে আছে নিগ্রো সারি সারি;
ইয়ান্কী ঐ,--ঐ য়ুরোপী,--চীনে-তাতার-মুর
তোমার বুকের পাঁজর দলে টলতেছে হুড়ুমুড়,--
ফেনিয়ে তুলে খুন্খারাবি,---খেলাপ,---খবরদারী!

দিনের আলো ঝিমিয়ে গেল,---আকাশে ঐ চাঁদ
-- চপল হাওয়ায় কাঁকন কাঁদায় নীলনদেরি বাঁধ!
মিশর-ছুড়ি গাইছে মিঠা শুঁড়িখানার সুরে
বালুর খাতে, প্রিয়ের সাথে,--খেজুরবনে দূরে!
আফ্রিকা এই,---এই যে মিশর,---যাদূর এ যে ফাঁদ!

‘ওয়েসিসের ঠাণ|ডা ছায়ায় চৈতিচাঁদের তলে
মিশরবালার বাঁশির গলা কিসের কথা বলে|
চলছে বালুর চড়াই ভেঙে উটের পরে উট,--
এই যে মিশর,--আফ্রিকার এই কুহকপাখাপুট!
---কি এক মোহ এই হাওয়াতে,---এই দরিয়ার জলে!

শীতল পিরামিডের মাথা,--‘গীজের মূরতি
অন্কবিহীন যুগসমাধির মূক মমতা মথি
আবার যেন তাকায় অদূর উদয়গিরির পানে!
‘মেম্ননের ঐ কণ্ঠ ভরে চারণ-বীণার গানে!
আবার জাগে ঝাণ্ডাঝালর,--জ্যান্ত আলোর জ্যোতি!

The text publised in this blog is written by Jibanananda Das. Jibanananda Das (Bengali: জীবনানন্দ দাশ, /dʒɪbɒnʌnɒndɔː dʌʃ/) (17 February 1899 – 22 October 1954) was a Bengali poet, writer, novelist and essayist. Due to copyright law of Bangladesh and India His works are available under public domain from 2014 after 60 years of his death. Me being an admirer of his work, took the liberty to type and publish this text online. This text is not proof read and not complete. In case of any dispute please contact me snewaj at gmail dot com.