রবিবার, ১৬ নভেম্বর, ২০১৪

চাঁদিনীতে

বেবিলোন কোথা হারিায়ে গিয়েছে,---মিশর-‘অসুর কুয়াশাকালো;
চাঁদ জেগে আছে আজো অপলক,--মেঘের পালকে ঢালিছে আলো!
েস যে জানে কত পাথারের কথা,---কত ভাঙা হাট মাঠের স্মৃতি!
কত যুগ কত যুগান্ত্মরের সে ছিল জ্যোত্স্না, শুক্লাতিথি!
হয়তো সিদিনো আমাদেরি মতো পিলুবারোয়াঁর বাঁশিটি নিয়া
ঘাসের ফরাশে বসিত এমনি দূর পরদেশী প্রিয় ও প্রিয়া!
হয়তো তাহারা আমাদেরি মতো মধু-উত্সবে উঠিত মেতে
চাঁদের আলোয় চাঁদমারী জুড়ে,---সবুজ চরায়,---সবজী ক্সেতে!
হয়তো তাহারা দুপুর-যামিনী বালুর জাজিমে সাগরতীরে
চাঁদের আলোয় দিগদিগন্ত্মে চকোরের মতো চরিত ফিরে!
হয়তো তাহারা মদঘূর্ণনে নাচিত কাঞ্চীবাঁধন খুলে
এম্নি কোন্ এক চাঁদের আলোয়,---মরু-‘ওয়েসিসে তরুর মূল্যে!
বীর যুবাদল শত্রুর সনে বহদিনব্যাপী রণের শেষে
এম্নি কোন্ এক চাঁদিনীবেলায় দাঁড়াত নগরীতোরণে এসে!
কুমারীরর ভিড় আসিত ছুটিয়া, প্রণীয়ীর গ্রীবা জকড়ায়ে নিয়া
হেঁটে যেত তারা জোড়ায় জোড়ায় ছায়াবীথিকার পথটি দিয়া!
তাদের পায়ের আঙুলের ঘায়ে খড়-খড় পাতা উঠিত বাজি,
তাদের শিয়রে দুলিত জ্যোত্স্না-চাঁচর চিকণ পত্ররাজি!
দখিনা উঠিত মর্মরি মধূবনানীর লতা-পল্লব ঘিরে,
চপল মেয়েরা উঠিত হাসিয়া,---‘এর বল্লভ,---এল রে ফিরে!
---তুমি ঢুলে যেতে দশমীর চাঁদ তাহাদের শিরে সারাটি নিশি,
নয়নে তাদের দুলে যেতে তুমি,---চাঁদনী-শরাব,---সরার শিশি|
সেদিনো এম্নি মেঘের আসরে জ্বলেছে পরীর বাসরবাতি,
হয়তো সেদিনো ফুটেছে মোতিয়া,ঝরেছে চন্দ্রমল্লীপাঁতি!
হয়তো সেদিনো নেশাখোর মাছি গুমরিয়া গেছে আযুরবনে,
হয়তো সেদিনো আপেলের ফুর কেঁপেছে আঢুল হাওয়ার সনে
হয়তো সেদিনো এলাচির বন আতারের শিশি দিয়েছে ঢেলে,
হয়তো আলেয়া গেছে ভিজা মাঠে এমনি ভূতুড়ে প্রদীপ জ্বেলে!
হয়তো সেদিনো ডেকেছে পাপিয়া কাঁপিয়া কাঁপিয়া ‘সরোর শাখে,
হয়তো সেদিনো পাড়ার নাগরী ফিরেচে এমনি গাগরি কাঁখে!
হয়তো সেদিনো পানসী দুলায়ে গেছে মাঝি বাঁকা ঢেইট বেয়ে,
হয়তো সেদিনো  মেঘের শকুনডানায় গেছিল অাকাশ ছেয়ে!
হয়তো সেদিনো  মানিকজোড়ের মরা পাখিটির ঠিকানা মেগে
অসীম আকাশে ঘুরেছে পাখিনী ছট্ফট্ দুটি পাখার বেগে!
হয়তো সেদিনো খুর্ খুর্ করে খরগোশছানা গিয়েছে ঘুরে
ঘন-মেহগিনি-টার্পিন-তলে---বালির জর্দা বিছানা ফুঁড়ে|
হয়তো সেদিনো জানায়লার নীল জাফরির পাশে একেলা বসি
মরেন হারিণী হেরেছে তোমাে---বনের পারের ডাগর শশী!
শুক্লা একাদশীর নিশীথে মণিহর্মের তোরণে গিয়া
পারাত-দূত পাঠায়ে দিয়েছে প্রিয়ের তরেতে হয়তো প্রিয়া!
অলিভকুঞ্জো হা হা করে হাওয়া কেঁদেছে কাতর যামিনী ভরি!
ঘাসের শাটিনে আলোর ঝালরে ‘মার্টিলপাতা পড়েছে ঝরি!
 উইলোর বন উঠেছে ফঁপায়ে,---‘ইউ তরুশাখা গিয়েছে ভেঙে,
তরুণীর দুধ-ধবধবে বুকে সাপিনীর দাঁত উঠেছে রেঙে!
কোন গ্রীস,--কোন কার্থেজ, রোম, ‘ক্রুবেদেূর-যুগ কোন্---
চাঁদের আলোয় স্মৃতির কবর-সফরে বেড়ায় মন!
জানি না তো কিছু---মনে হয় শুধু এম্নি তুহিন চাঁদের নিচে
কত দিকে দিকে---কত কালে কালে হয়ে গেছে কত কি যে!
কত যে শ্মশান,---মশান কত যে,--কত যে কামনা-পিপাসা-আশা
অস্ত্মাচাঁদের আকামে বেঁধেছে আরব-উপন্যাসের বাসা!

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

The text publised in this blog is written by Jibanananda Das. Jibanananda Das (Bengali: জীবনানন্দ দাশ, /dʒɪbɒnʌnɒndɔː dʌʃ/) (17 February 1899 – 22 October 1954) was a Bengali poet, writer, novelist and essayist. Due to copyright law of Bangladesh and India His works are available under public domain from 2014 after 60 years of his death. Me being an admirer of his work, took the liberty to type and publish this text online. This text is not proof read and not complete. In case of any dispute please contact me snewaj at gmail dot com.